সোমবার, ২৩ এপ্রিল, ২০১২

বেড়েছে নারী নির্যাতন দরকার উন্নত মূল্যবোধের চর্চা


নারীরা নানাভাবে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেনআমরা আরো বেশি আধুনিক ও সভ্য হয়ে ওঠার দাবি করছিনারীবাদী সংগঠনগুলো আগের চেয়ে অনেক বেশি সোচ্চারপুরুষেরা তাদের সাথে যোগ দিয়ে নারীবঞ্চনার অবসানে এগিয়ে এসেছেনআমাদের পাঠ্যসূচিতে সবপর্যায়ে পরিবর্তন আনা হয়েছে নারী অধিকারের বিষয়টি মাথায় রেখেউচ্চশিক্ষার অনেক বিষয়ে নারীদের নিয়ে গবেষণা হচ্ছেসরকার কোটা করে সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে নারীদের বিশেষ সুবিধা দেয়ার চেষ্টা করছেসবার ওপর আমাদের সরকার বিরোধী দলের নেতা নারীপ্রায় ২০ বছর ধরে নারী নেত্রীদের অধীনে বাংলাদেশের শাসন পরিচালিত হচ্ছেকিন্তু, পারিবারিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে নারীদের অসহনীয় বঞ্চনা ও নির্যাতনের মাত্রা কমেনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রকাশিত সামপ্রতিক এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, দেশে অপরাধের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে নারী নির্যাতনস্বভাবতই প্রশ্ন জাগে, আমাদের এত সব প্রচেষ্টার মধ্যে গলদ কোথায়? আমরা কি শুধু গলাবাজিতে ব্যস্ত?
ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০০৯-১০ অর্থবছরে যেখানে নারী নির্যাতনের সংখ্যা ছিল ১৩ হাজার ৫২৫টি, ২০১০-১১ অর্থবছরে তা ৩১ দশমিক ৬৯ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭ হাজার ৮১১টিতে২০১০-১১ অর্থবছরে ধর্ষণের সংখ্যা বেড়েছে ৩৭৫টিবিগত অর্থবছরে ছিল তিন হাজার ৮৪টি২০১০-১১তে তা দাঁড়িয়েছে তিন হাজার ৪৫৯টিতেএ পরিসংখ্যান অনুযায়ী প্রতিদিন গড়ে ৯টির বেশি ধর্ষণের ঘটনা সরকারের অভিযোগ খাতায় উঠছেএটি নারীদের বিরুদ্ধে সংঘটিত চূড়ান্ত পর্যায়ের একটি অপরাধযৌতুক আদায় করতে গিয়ে নির্যাতনে প্রাণ হারাচ্ছেন প্রতিনিয়ত নারীরাএ ক্ষেত্রে পরিবারের অন্য নারী সদস্যরা নির্যাতিত নারীর বিরুদ্ধে অবসান নিচ্ছেনইভটিজিংয়ের বিষয়টি সব সময় আলোচনায় থাকছে অর্থাৎ এটি অহরহ ঘটে চলেছেঅপেক্ষাকৃত কম বয়সী অসংখ্য মেয়ে প্রতিনিয়ত বখাটে ছেলেদের অত্যাচার সহ্য করে যাচ্ছেঅনেকে অপমান সহ্য করতে না পেরে আত্মহননের পথ বেছে নিচ্ছেএ মিছিল ক্রমেই দীর্ঘ হচ্ছেইভটিজিংয়ের প্রতিবাদ করায় প্রায়ই বখাটেদের হাতে নিকটাত্মীয়দের প্রাণ হারানোর খবর পত্রিকার শিরোনাম হচ্ছেপ্রাণ হারানোর তালিকায় অনেক সময় শিক্ষকদেরও দেখা যাচ্ছেঅর্থাৎ তারা ছাত্রীদের অপমানের প্রতিবাদ করায় বখাটেদের আক্রমণের লক্ষ্যে পরিণত হচ্ছেনঅনেক সময় বখাটেরা সিডে ঝলসে দিচ্ছে মেয়েদের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওই প্রতিবেদনে ৮৫টি অ্যাসিড নিক্ষেপের ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে
নানা প্রচার-প্রচারণার পরও নারীর প্রতি সহিংস আচরণ কমছে নাএর জন্য বর্তমান সামাজিক ব্যবস্থাকে দায়ী না করে পারা যায় না আমরা নারী অধিকার আদায়ের ব্যাপারে আন্দোলন সংগ্রামে অনেক দূর এগিয়ে গেছি কিন্তু প্রকৃতপক্ষে নারী উন্নয়নের জন্য আমাদের মধ্যে যতটা মানবিক মূল্যবোধ অর্জিত হওয়ার দরকার, তা হয়নিসোজা কথা, মূল্যবোধের অবক্ষয় রোধ করা যায়নিনারী অধিকার আন্দোলন হয়তো জোরদার হয়েছে, কিন্তু  নৈতিক অবক্ষয়ের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছেসে জন্য রাষ্ট্রীয় পর্যায় থেকে সে মূল্যবোধ জাগ্রত করার জন্য উদ্যোগ নেয়া দরকারঅন্য দিকে নারী প্রগতির আন্দোলনের পাশাপাশি নারী-পুরুষ সবার উন্নত মূল্যবোধের অধিকারী হওয়ার জন্যও আন্দোলন দরকারআসুন, সবাই মিলে আমরা
সেই প্রচেষ্টা চালাই

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন